সম্প্রতি নিউইয়র্কের স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, খাবার এবং খেলার সময় মা ও শিশুর মধ্যকার পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া শিশুদের স্থূলতার ওপর প্রভাব ফেলে। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল, শিশুদের লালন-পালনে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে তাদের স্থূলতা সমস্যা কমানো যায় কিনা, তা দেখা।
এটাই প্রথম গবেষণা, যেখানে দেখানো হয় পারিবারিক মিথস্ক্রিয়া কীভাবে শিশুদের ক্ষুধা ও ডায়েটের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। এ গবেষণায় শিশুদের স্থূলতা সমস্যা সমাধানে বেশকিছু বিষয়ের দিকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয়। স্থূলতা সমস্যায় ভুগতে থাকা শিশুদের উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
গর্ভাবস্থায় যেসব মা ধূমপান বা অন্য কোনো তামাক, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় পান করেন; পরে তাদের সন্তানদের স্থূলতা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ পদার্থগুলো ভ্রূণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি, পর্যাপ্ত রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায়। এর ফলে বিপাকে সমস্যা দেখা দেয়, যা পরে শিশুর স্থূলতা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে।
গবেষণায় বলা হচ্ছে, ছোটবেলায় শিশুদের খেলাধুলায় যেসব মা-বাবা কম আগ্রহ দেখান, তাদের সন্তানদের স্থূলতা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি পর্যাপ্ত খেলাধুলার ব্যাপারে মা-বাবার সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি শিশুদের শারীরিক কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
শিশুরা কী খাচ্ছে, সেদিকে মা-বাবার খেয়াল রাখা উচিত। প্রতিদিন সকালের নাশতায়, স্কুলের টিফিনে পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় শিশুরা স্কুলে গিয়ে বাইরের মুখরোচক খাবার খেয়ে থাকে। এগুলো তাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি স্থূলতা বৃদ্ধি ঘটায়। তাই শিশুদের খাবারের বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সতর্ক থাকতে হবে।
শিশুরা সচরাচর খাবার খেতে অনাগ্রহ দেখায়। এজন্য তাদের খাবারের তালিকায় ভিন্নতা আনতে হবে। খাদ্যতালিকায় ফলমূল, সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে। সেসঙ্গে শিশুদের নতুন নতুন খাবার খেতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রথমদিকে তারা খেতে চাইবে না। কিন্তু হাল ছাড়া যাবে না। তাদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে নিত্যনতুন খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
এছাড়া খাদ্যতালিকা থেকে ফাস্টফুডের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। কর্মজীবী মায়েরা অনেক সময় ব্যস্ত থাকেন। হাতে সময় কম থাকায় অনেক মা-বাবা তাদের শিশুদের ফাস্টফুড খাবার খাওয়ান। এটা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে কর্মজীবী মায়েরা যেটা করতে পারেন, আগে থেকেই বাড়িতে খাবার তৈরি করে রাখতে পারেন।
অবশ্যই খাবার স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করতে হবে। খাবার বাইরে না রেখে রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে। কারণ ঠাণ্ডা, বাসি খাবার শিশুদের জন্য ক্ষতিকর। সবশেষে বলা যায়, শিশুদের স্থূলতা হ্রাসে পরিবারের সদস্যদের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে, বিশেষ করে মা-বাবার। শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করা, তাদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ানো এসবের মধ্য দিয়ে মা-বাবা তাদের শিশুদের এ সমস্যার সমাধান আনতে পারেন।
সূত্র: হেলথ লাইন
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।